(রূপকথাটি তোমাদের জন্য বাংলা করেছেন অদ্বৈত মারুত)
বিশাল এক জঙ্গলের মাঝখানে ছিল বড় এক পুকুর। সব পশুপাখি আসতো সেই পুকুরের পানি পান করতে।
এই পুকুরেই দীর্ঘদিন ধরে বাস করতো ছোট্ট একটি কচ্ছপ।
তার সঙ্গে ছিল সারসের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। তারা দু’জন এক সঙ্গে খেলাধুলা করতো।
সারস সুযোগ পেলেই আকাশে ওড়ার নানা গল্প করতো বন্ধু কচ্ছপের সঙ্গে। কচ্ছপও সে সব গল্প শুনে খুব মজা পেত ও বন্ধু সারসকে জলে বাস করার নানা গল্প শোনাতো।
কিন্তু কচ্ছপের মনে ছিল ছোট্ট একটি দুঃখ।
বন্ধু সারস কী সুন্দর করেই না আকাশে টইটই করে উড়ে বেড়ায়। অথচ সারাদিন তাকে জলে পরে থাকতে হয়।
এ দুঃখের কথা কচ্ছপ প্রায়ই বন্ধু সারসকে জানায়।
একবার হলো কী, প্রতি বছরের মতো সে বার প্রচুর বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরের জল একেবারেই কমে গিয়েছিল। বলা যায়, একেবারে শুকিয়েই গিয়েছিল।
কচ্ছপেরও পানিতে বাস করা খুব কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল।
এসব দুঃখের কথা বন্ধু সারসকে বলতো সে।
সারসও কচ্ছপের মনের দুঃখ বুঝতে পেরে ভাবলো, বন্ধু যদি আমার সঙ্গে উড়তে পারতো, তা হলে কতই না মজা হতো!
কিন্তু কচ্ছপের তো তার মতো পাখা নেই যে উড়তে পারবে।
তো একদিন হলো কী, পুকুরের কম পানিতে বন্ধুর থাকতে কষ্ট হওয়ায় সে জঙ্গলের বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে লাগল বড় কোনো পানিভর্তি পুকুর পাওয়া যায় কিনা।
সারস সারা বনে পুকুর খুঁজছে তো খুঁজছেই। কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।
হঠাৎ সারসের মাথায় এলো একটি নতুন পরিকল্পনা।
আচ্ছা, ইচ্ছে করলেই তো কচ্ছপ বন্ধু নীল পাহাড়ের কাছে লেকে বাস করতে পারে। তাহলে তো আমরা আরও বেশিক্ষণ আড্ডা দিতে পারব।
যা ভাবা, তাই কাজ।
কচ্ছপের কাছে এসে সারস এ প্রস্তাব দিলে কচ্ছপ বলল, ‘বন্ধু, তোমার প্রস্তাবটা মোটেও খারাপ না। কিন্তু এতে একটা সমস্যা আছে।’
‘নীল পাহাড় তো অনেক দূরে। হেঁটে হেঁটে অদ্দুর যাওয়া তো আমার পক্ষে অসম্ভব!’
এ কথা শুনে সারস তো খুব চিন্তায় পড়ে গেল। ভাবল, বন্ধুর কথা তো এক রত্তিও মিথ্যা নয়।
তা হলে কি করা যায়?
হঠাৎ করেই সারস চিৎকার করে উঠে কচ্ছপকে বললো, ‘বন্ধু, পেয়ে গেছি, উপায় একটা পেয়ে গেছি।’
‘আমি তোমাকে ওড়া শেখাবো।’
সারস আরও বললো, ‘এসো বন্ধু, এসো। কে বলেছে তুমি উড়তে পারবে না!’
‘এসো, আমরা ওড়ার চেষ্টা করি। মোটেও আমি রসিকতা করছি না।’
কচ্ছপ বললো, ‘আমিও তোমার সঙ্গে কখনও রসিকতা করিনি। আমি এ ব্যাপার নিয়ে সত্যিই চিন্তিত।’
‘আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি আর এ ব্যাপারে আরও নতুন বুদ্ধি আঁটছি।’
‘যদি তুমি শক্ত করে কোনো কাঠি পায়ের নখের সঙ্গে আটকে নিতে পারো, তাহলে খুব ভালো হয়। আমি সেই কাঠিটা মুখ দিয়ে চেপে ধরে থাকবো। তুমি উড়বে, সঙ্গে আমিও। তখন কী যে মজা হবে!’
সারস বললো, ‘বন্ধু, সত্যিই তুমি চমৎকার একটা পরিকল্পনা করেছ।’
এ কথা বলে সারস কচ্ছপকে সতর্ক করে দিলো, ‘তবে বন্ধু, ওড়ার সময় মনের ভুলেও যেন আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করো না।’
‘আর যদি করো, তা হলে কিন্তু ঝপাৎ করে পড়ে যাবে।’
কচ্ছপ কি শেষে পড়ে গিয়েছিলো?
কী মনে হয় তোমার?
জানাও আমাদের...